Breaking

Tuesday, April 28, 2020

জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী মারা গেছেন



অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর জীবনাবসান :

আজ ভোর চারটার দিকে বাংলাদেশের খ্যাতিমান প্রকৌশলী ও জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী মারা গেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নাইলাইহি রাজিউন।
তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।

তাঁর আত্মীয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টির ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবায়েত-উল-ইসলাম জানান, সোমবার রাত ২টার দিকে ঘুমের মধ্যে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর ‘ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক’ হয়। “ভোর ৪টার দিকে খালুকে নিয়ে যখন স্কয়ার হাসপাতালে যখন নিয়ে গেলাম, ততক্ষণে সব শেষ।” তাঁর জামাতা অধ্যাপক জিয়া ওয়াদুদও মঙ্গলবার ভোরে ফেইসবুকে তার মৃত্যুর খবর জানান।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনের আগে তিন মাসের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা জামিলুর রেজা চৌধুরী মৃত্যু পর্যন্ত ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য ছিলেন। তিনি ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য।

একুশে পদক পাওয়া এই সিভিল ইঞ্জিনিয়ারকে ২০১৮ সালে সরকার জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়।

বাংলাদেশে গত কয়েক দশকে যেসব বড় বড় ভৌত অবকাঠামো হয়েছে, তার প্রায় সবগুলোতেই কোনো না কোনোভাবে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করা এই সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।

১৯৯৩ সালে যাদের হাত দিয়ে বাংলাদেশের ইমারত বিধি তৈরি হয়েছিল, জামিলুর রেজা চৌধুরী তাদের একজন।

দেশের প্রথম মেগা প্রকল্প বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণে ৫ সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। আর এখন পদ্মার ওপরে দেশের সবচেয়ে বড় যে সেতু তৈরি হচ্ছে, সেই প্রকল্পের আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্যানেলেরও নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন তিনি।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেলসহ চলমান নানা উন্নয়ন প্রকল্পেও বিশেষজ্ঞ প্যানেলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন তিনি।

১৯৪৩ সালের ১৫ নভেম্বর সিলেট শহরে প্রকৌশলী আবিদ রেজা চৌধুরী ও হায়াতুন নেছা চৌধুরীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন জামিলুর রেজা চৌধুরী। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয় ৷

বাবার বদলির চাকরির কারণে তার শৈশব কেটেছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। প্রাথমিক শেষ করে ময়মনসিংহ জেলা স্কুলে ভর্তি হলেও পরে তার পরিবার ঢাকায় চলে আসে। প্রথমে নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও পরে সেইন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুল থেকে ১৯৫৭ সালে তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন।

ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৫৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (তখনকার আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ)। ১৯৬৩ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক শেষ করে সেখানেই শিক্ষকতা শুরু করেন।

১৯৬৪ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে চলে যান জামিলুর রেজা চৌধুরী। সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডভান্স স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর করেন। ১৯৬৮ সালে সেখানেই পিএইচডি শেষ করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল ‘শিয়ার ওয়াল অ্যান্ড স্ট্রাকচারাল অ্যানালাইসিস অব হাইরাইজ বিল্ডিং’।

পিএইচডি শেষে দেশে ফিরে আবার বুয়েটে শিক্ষকতা শুরু করেন জামিলুর রেজা চৌধুরী। পদোন্নতির ধারায় ১৯৭৬ সালে হন অধ্যাপক।

২০০১ সাল পর্যন্ত বুয়েটে অধ্যাপনা করার সময় বিভিন্ন সময়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান এবং ফ্যাকাল্টির ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮২ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বুয়েটের কম্পিউটার সেন্টারের পরিচালক ছিলেন তিনি। পরে ওই কম্পিউটার সেন্টারই বুয়েটের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনলজিতে পরিণত হয়। 

বুয়েট থেকে অবসরে যাওয়ার পর ২০০১ সালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেন অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, সেই দায়িত্বে তিনি ছিলেন ২০১০ সাল পর্যন্ত। এরপর ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য হিসেবে তিনি কাজ শুরু করেন।

দেশের জন্য তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। দেশপ্রমিক এ মেধাবী মণীষীর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

সূত্র: বিডি নিউজ

No comments:

Post a Comment